বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:১৯ অপরাহ্ন
তরফ নিউজ ডেস্ক : দুর্নীতির মামলায় জামিন বাতিলের চার ঘণ্টা পর আবারও জামিন পেলেন পিরোজপুর-১ আসনের সাবেক এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম এ আউয়াল এবং তার স্ত্রী লায়লা পারভীন।
একই সঙ্গে আউয়াল এবং তার স্ত্রী লায়লা পারভীনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়া বিচারক মো. আবদুল মান্নানকে তিন ঘণ্টার মাথায় বদলি করে দেয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (৩ মার্চ) বিকেল পৌনে ৪টার দিকে পিরোজপুর দ্বিতীয় যুগ্ম জেলা জজ আদালতের বিচারক নাহিদ নাসরিনের আদালতে জামিন বাতিলের আদেশ পুনর্বিবেচনার আবেদন জানানো হলে জামিন মঞ্জুর করেন বিচারক।
এর আগে দুপুর ১২টার দিকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম এ আউয়াল এবং তার স্ত্রী লায়লা পারভীনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন পিরোজপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আবদুল মান্নান। তবে এ আদেশের মাত্র তিন ঘণ্টার মধ্যে তাকে বদলি করে দেয়া হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেন আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) খান মো. আলাউদ্দিন।
আসামিপক্ষের আইনজীবী দেলোয়ার হোসেন বলেন, পিরোজপুর দ্বিতীয় যুগ্ম জেলা জজ আদালতের বিচারক নাহিদ নাসরিনের আদালতে আউয়াল দম্পতির জামিন বাতিলের আদেশ পুনর্বিবেচনার আবেদন জানানো হলে জামিন মঞ্জুর করেন বিচারক।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী মুনসুর উদ্দিন আহমেদ বলেন, আউয়াল দম্পতির জামিন বাতিলের আদেশ দেয়ার পরপরই জেলা জজ আদালতের বিচারক আবদুল মান্নানকে বদলি করে আইন মন্ত্রণালয়। এরপর যুগ্ম জেলা জজ দায়িত্ব পান। তিনি বসেই আউয়াল দম্পতিকে জামিন দেন।
দুদকের আইনজীবী মুনসুর উদ্দিন আরও বলেন, কোনো বিচারক বর্তমানে জেলায় নেই, যিনি দায়িত্ব বুঝে নিতে পারবেন। এজন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।
আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) খান মো. আলাউদ্দিন বলেন, রায়ের পরপরই মঙ্গলবার (০৩ মার্চ) বিকেল ৩টার দিকে পিরোজপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আবদুল মান্নানকে বদলির আদেশ দেয়া হয়। এ বিষয়ে লিখিত কোনো কাগজপত্র আমরা এখনও পাইনি। এটি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেখতে হবে। তবে জজকে বদলির বিষয়টি নিশ্চিত।
জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শহিদুল হক খান পান্না বলেন, সাবেক এমপি আউয়ালের বিরুদ্ধে দুদক যে মামলা করেছে তাতে কোনো ক্রিমিনাল অফেন্স না থাকায় আমরা জামিনের আবেদন করি। জেলা ও দায়রা জজ সম্ভবত আর্থিকভাবে লাভবান হয়ে জামিনের আবেদন নাকচ করেছেন। কিছুক্ষণ পরই জানতে পারি জেলা ও দায়রা জজ আবদুল মান্নানের স্থলে ভারপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ হয়েছেন দ্বিতীয় যুগ্ম জেলা জজ নাহিদ নাসরিন। এরপরই জামিন বাতিলের আদেশ পুনর্বিবেচনার আবেদন জানানো হয়। ভারপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ নাহিদ নাসরিন শুনানি শেষে আউয়াল ও তার স্ত্রী লায়লা পারভীনের দুই মাসের জামিন মঞ্জুর করেন।
আদালত সূত্র জানায়, দুদকের তিন মামলায় উচ্চ আদালত থেকে আট সপ্তাহের নেয়া জামিনের মেয়াদ শেষ হওয়ায় মঙ্গলবার পিরোজপুর জেলা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন আউয়াল ও তার স্ত্রী লায়লা। পরে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
ক্ষমতার অপব্যবহার, প্রতারণা, জালিয়াতি, অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে পিরোজপুর-১ আসনের সাবেক এমপি এবং জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম এ আউয়াল এবং তার স্ত্রী পিরোজপুর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি লায়লা পারভীনের বিরুদ্ধে গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর পৃথকভাবে তিনটি মামলা করে দুদক।
মামলাগুলোর মধ্যে একটিতে আউয়াল ও তার স্ত্রী লায়লা পারভীনকে আসামি করা হয়েছে। বাকি দুটিতে এককভাবে আউয়ালকে আসামি করা হয়। তিনটি মামলারই বাদী দুদক প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. আলী আকবর।
মামলায় আউয়াল ও তার স্ত্রী লায়লা পারভীন মঙ্গলবার আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন। জেলা জজ আদালতের বিচারক আবদুল মান্নান আবেদন খারিজ করে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এরপর আসামিরা মেডিকেল ওয়ার্ডে যাওয়ার আবেদন করেন। বিচারক তাদের চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশনসহ সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র জমা দেয়ার আদেশ দেন। এর মধ্যেই বিচারক পরিবর্তন হলে ফের জামিন পুনর্বিবেচনার আবেদন করেন তারা।